শনিবার, ১৪ মে, ২০১১

ইলিয়াস কমল

বিবাহ বিচ্ছেদ
(যার শূন্যতা বোধ করে নিমগ্ন চারপাশ)

কাঁচা মাংস দেখিয়েছিলো রাজহাঁস, ভেবেছিলাম তা
                   জল ও মধুর সংসার
কেবল পাখি নয়, নয় খাঁচাভাঙা রূপান্তরের হল্লা,
যে বাগানে জন্মেছিলো পরিতাপের শ্যাওলা
আমি কেন জানি ভুল রূপের সওদার কথা ভুলে গিয়েছিলাম
তবুও সেই রঙ কেন এত মধুর?
            সে কি আজন্ম ঘুরেছিলো দেহের চারপাশ?
মিছে জল ও ত্রিকালের শৈশব সময়ের রূপ ধরে বসে আছো কস্তুরি?
                 দেখো আমার গায়ে কেমন গন্ধ


বুনোমেঘের কাছে চিঠি

এখানো পাথর ও আগুনের ভাষা জানে মেঘ,
          রৌদ্রে ভেসে যাওয়া জল জোছনা
কেবল লোভনীয় ভুতুড়ে ঘোড়া
            জলে নেমে নেচে যায় আরো দীর্ঘ গল্পের ইতিহাস নিয়ে।
কেন তবে আদিম সংসারে পাথর ও চিত্রলিপির মুছে যায়?

ভুলে গেলে জলে যায় চিত্রপুরির রূপ!
কে জানে নীল সমুদ্র তারও চেয়ে বেশি জানে রঙ ও রংধনুর মাহাত্ম্য!

রাফখাতা ডায়েরি

সন্তাপের মধুর ভুলগুলি জেনেছিলো পা ও আনন্দের কুসুম
আমাদের চারিদিকে তখন কেবল জোছনার ছায়া- মৃতের আশ্রম
সকালে পূর্বদেশ ভুলে দৌড়ায় চুলখোলা পাখি,
আমি তারে কী নামে ডাকি?

যে ছিলো কোনও রাজপুত্রের সহযাত্রী নয়তো নিজেই আনন্দবৈরাগী
তবুও মৃত্যুর মতো স্বাদ নিয়ে কেবল প্রেমের কাঙাল পাখিমন
বিরাগ হয়ে দাঁড়ায়ে থাকে পথের সংসার ফেলে ঐ হিরামন-
পাখি তুই বোলের কথা বলিস, ঘরের পানে চলিস আমার কথা
বলবি বলে লিখে রাখি খাতা খুলে

প্রজাপতি কাল

মৃত ছিলাম কি কখনো? কখনো কি জেগে ছিলাম পুনর্জন্মে?
সেই গল্পের কথা বলি আজ- একটা ঘোড়া ছিলো লালনীল ডোরাকাটা
কেবল রেসের ময়দানে ছিলো না তার দৌড়
অথচ রাত্তির নেমে এলে সেই ঝর্ণার দৌড় বেড়ে যেতো জোয়ারের মতো
আমি কোনও কিংবদন্তীর গল্প জানতাম না,
                   তবুও নেমেছিলাম সাগরে-
ঐ সাগর কেবল মিছে ভুলানো রাশি রাশি বেদনার ভাঁড়ার
একবার মাত্র বিকেলের ঘুম পাড়ানো রোদে আমরা প্রজাপতি হই

নাগরিক

একটামাত্র নদী- তাও আমাদের কেনা নয়
যা কিনা উপহার পেয়েছিলাম অনুভূতির বদৌলতে কেনা
তরতাজা বেশকিছু পয়সার বিনিময়ে-
                                               এই বিনিময় তবুও
কোনও সূত্রের ভেতর ছিলো না; ছিলো না বাণিজ্যেরও পসরা

আমরা তথাপি ভেতর-বাহির করতে গিয়ে হারিয়ে ফেলি
                          সবুজ শৈশবের ঘুড়ি;
বৃত্তে বন্দী আমাদের নগর ভালোবাসে তবুও অন্ধত্ব-
সেই অন্ধের হাতে লেখা পড়তে গিয়ে খুঁজে পাই অমরত্বের গল্প
তার ঝোলায় আছে

আমাদের অমরত্ব লেখা থাকে ঝোলার ভেতর
আমাদের অমরত্ব লেখা থাকে রক্তের শোষণে
তাই কেবল অদৃশ্য ঘুড়ির পেছনে ছুটে বিস্রস্ত বালক
                ছুটে... ছুটি... ছুটাই...
খুঁজি সেই ঘুড়ির নাটাই-সুতা, মিল অমিলের হিসেবে তবুও
জাবর কাটা একটা মানুষ এইভাবেই ফিরে যায় শূন্যহাতে

একসন্ধ্যায় আমরা সবাই তাই অন্ধ হয়ে অমরত্বকে বরণকরি


প্রভাতফেরির প্রস্তুতি পর্ব

একটা মৃত্যুমুখি কলাপাতার যানবাহন দেখি
প্রতিদিন শিস দেয় ভোরবেলায়
ঘুম থেকে উঠার আগেই তার কথা মনে হলে
আমি আবার ঘুমিয়ে পরি সকালকে সকাল ভেবেই
সকালেই তো রাত শেষ হতো, তাই না?

জানি না, শব বাহকেরা আমাকে ডাকে কিনা-
তবুও এড়িয়ে চলি কোনও পথশিশুদের ডাক
আরও কেউ ডাকে অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার মতো করে
কার ডাকে ঘুম ভাঙে শ্মশানের গাড়ির?
বাড়ির সামনে এসে হাক দেয় সবজিওয়ালা
একটুকরো সবুজ জানালা দিয়ে আমি নিত্য ডাকি তাকে
আমার ঘরে বলি- প্রিয় মৃত্যুমুখি শৈশব তুমি আমার বন্ধু ছিলে-
এসো আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে
                  আমরা একবেলা গল্প করে কাটাই


অব্যবহৃত পঙ্ক্তি ১

ঘুম জাগিয়ে রাখা কিছুদিন,
কিছুদিন নির্মল ট্রাফিক জ্যাম!
জেগে জেগে রাত্রির কূলে সমর্পণ করি
প্রেম ও কামের সৌধমালা,
পেছনে তবু ছুটে আত্মহত্যার গান,
             কেবল ভেসে যাওয়া স্বপ্ন দেখে
টিকে থাকা রাতগুলো এমনি এমনি ঝরে যায়

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন