শুক্রবার, ১৩ মে, ২০১১

অসীম ইশতিয়াক


পোড়াবাড়ি

সূর্যটা ডুবে যাচ্ছে- কিন্তু তার সাথে আমার মন খারাপ হবার কী সর্ম্পক
সেতো প্রতিদিনই যায়।  অতো আশ্চর্য হয়ে নিজেকে কখনও...
উপলব্ধি করি নি।
কাঠের পোড়া বাড়িটিতে নখের টোকা দেবার শব্দ
বাহিরে দাঁড়িয়ে যে পোড়ানো বাড়িটিকে দেখছি তার পুরানো কাঠের
পোড়ানো মরিচা রঙ- অন্ধকারে আবছা হয়ে যাচ্ছে।

দীর্ঘতম সময় পর ও ভেতরে একা,
যে চোখ আমি দেখবো তাতে অনুভূতির ওঠানামা জেনেছি বহুপুরানকালে
নিশ্চিত করে জানি না কোন শাড়িটি পরেছে কিংবা কপালে টিপ আছে কিনা।
এতো কালের  অভিজ্ঞতা সব পোড়ালো-
ও যে নিটোলই থাকবে আর আমার কয়লা শরীরতো
চিরকালীন কাল; তবে যে জেনেছি সব শূন্যস্থানই পূরণ হয়ে যায়।

কিছু শ্যাওলা বট আগাছা হয়ে বেড়ে উঠে ধুলা আবর্জনায়
ভেতরটা পরিষ্কার
আগাছা আবর্জনার সাথে অযত্ন অবহেলার পুরনো সম্পর্ক।
এই শ্যাওলা বটের সৌন্দর্য সকলে জানে
  
এ বাড়িটি আবিষ্কার করি
সকল স্বাভাবিকতাই এ বটের কুশ জন্মে না
জলে মিশে গেলে জলকে বোঝা যায়।

পাখিরা সব বয়স্ক কাছিমের খোলসে
তার পিঠে মৃত আত্মারা কবুতরের খোঁপে  ঘুমন্ত নির্বিষ
পাখিরাতো গাছেই বাসা বাঁধে।

কয়লা কাঠের সুখ কচুরিপানার অন্তর্গত বায়ুকুঠুরি
সন্দেশের ফসিল পিঁপড়ার বাড়ি চেনে না
এ মৌসুমের সর্ব উকৃষ্ট তামাকের ন্যায় সূর্য মরে যায়।


নিরুদ্দেশ যাত্রা

কালো পাথর- নিরুদ্দেশ হবার তীব্র বাসনা আমার
কোনো এক জনমানবহীন অনন্ত অন্ধকারে- অস্তিত্বহীনতায়

তবে এই প্রগাঢ় পাথর তোমার জড়তা আমায় মুগ্ধ করে
তোমার কালচে রঙ এই অখণ্ডতা সেই নিরুদ্দেশ যাত্রার মতো অনিশ্চিত
পাথর এর গা ছুঁয়ে এলে এর কী মনে হয়
বাতাসও কি বিলীন হতে ভালোবাসে

চোখে লেগে আছে পাথরকুচির সবুজ
জলের শব্দ ও স্বাদ নিরুদ্দেশ
বাঁশির ক্ষতে যে দম পুরে দেই তার এক একটা ক্ষত- ভেতরে অন্ধকার
হতে সুরে বিলীন সেই সব হাওয়া পাথরকে ছোঁয় নি...

 মরতা

সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে, কাকদের উড়াউড়িও ভীষণ শীতের ভেতর
তোমাকে নিজের ভেতর থেকে দূরে সরে যেতে হচ্ছে
সময়ের নির্মম মৃত্যু নিষ্ফল আকাশের খোলসহীনতা
নিয়তি আমায় এর উপভোগ্যা করলো

লালবাড়ির দেয়ালে সূর্যের আলোর ফিরে যাওয়া দেখি
আমাকে সময়ের বাহিরে নিয়ে এলে
পরীদের পুরুষ খুন হয়ে যায়।

ভ্রমরের শাদাকুয়াশা নদীকে ঝাপটে ধরে আছে
বিস্তর মানুষের আনাগোনা দেখি
ভ্রমরের আবসাদ গ্রাস করে।

কিছু কালচে চা পোড়া ও ধূলির ঢিপি মন কাড়ে
পাশের এই আমাকে নিতান্ত বিলাসি দেখি
কিছু বৃক্ষের বর্ণনাতীত সৌন্দর্যে মরতা ধুয়ে যায়
সময়কে অনুভব না করা কাঙ্ক্ষিত জারুল

 অসূর্যস্পর্শা

নিষ্ঠুর কুড়াল নিয়ে ডেরা হতে প্রতিদিন বের হই
সর্ব উকৃষ্ট নারীটিকে নৃশংস রতিভোগের নিমিত্তে
এক নিঠুর শিকারির চোখে- বিজনভোগে ঘুরে বেড়েয় তারা
চুলচেরা বিবেচনা ও বিশ্লেষণে খুঁজে নিতে শ্রেষ্ঠাত্মাকে
প্রয়োজনে সকল আগাছানাশ করে তার আলোকিত সৌন্দর্য ডুব দেয়া হবে
নৃশংস রক্তাক্ত খুন কিংবা নাশকতাও
তাকে তৃপ্ত করার পরই অস্পৃশ্য করে দেওয়া হবে
এমন নিষ্ঠুর অস্ত্র সংগোপনে বহন করি।

অসূর্যস্পর্শাকে সূর্যের প্রথম স্পর্শ করার দিন
সেই ধর্ষণকে মুচকি হেসে স্বীকার করে নেওয়ার দিন
বাতাসের গায় আর্দ্রতার অক্ষরে প্রেম ও কামকে লিখে রাখি
এই নিষ্ঠুর কুড়াল গাছের বুকের বিদীর্ণ করার হাহাকার বোঝে না।

 জলাশয়

অবাক ঝড়ে কেটেছে রাত, সকালে চোখ পরিতৃপ্ত
ঝড়ের পর এই শান্ত প্রকৃতি আমার প্রিয়
এরও গভীর যন্ত্রণার রাত আছে।

দিনটা একলা নিজস্ব খেয়ালি স্বতন্ত্র
একে আত্মীকরণ করে নেই
এই নিদারুণ একার ভেতর প্রকৃতির বসবাস।

নিজস্ব জলাশয় যার শ্যাওলা গাম্ভীর্য
ও জীবন্ত পোনামাছের বিচরণ নিজেকেই ধারণ করে থাকে।
সেখানে বহুদূরে দাঁড়িয়ে থাকা
বটবৃক্ষ,কলাগাছ এবং কলা পাতার মজ্জাগত ফাটল
ভালোবেসে ধারণ করেছি।

জলাশয়ে কোনো নারী স্নানে নেমে এলে
জল আলিঙ্গনে আলোড়িত হয়, কেঁপে উঠছে প্রকৃতি
এই অনুপ্রবেশ একাকীত্ব ভাঙ্গে আলোড়িত হই অনিচ্ছায়
এই স্বকীয় প্রভাব জলাশয়কে দূর করে।

নারিকেলের গাছে প্রাচীন নারিকেলের আশ্চর্য এ পুরনো অভিজ্ঞতা
  ভোগান্তি আমার ইচ্ছাকৃত তৃপ্ততার উদ্বাস্তু জলাশয়।


উড়ন্ত চড়

ধুয়ে যাচ্ছে সব চিত্রকল্প রাজ্য উজার করে
রঙগুলো জট পাকিয়ে নিজেরাই তৈরি করছে শিল্প

কাঠের ঘোড়াগুলোও দৌড়াতে পারে
কাঁচের বয়ামে আটকে থাকা ফুল ও সন্দেশ
তার সৌরভে বিরত রাখলো রাখাল বালকদের।

বাশিও বাঁচে একা
                পুরাতন তানপুরাটাও সুরে বিভোর...
অন্ধকার ফুঁড়ে রেলগাড়িটা হারিয়ে যায়
পথে দাঁড়ানো লালবাতিটা থামতে বলে না...

আকাশ যখন নিজেই ঘুড়ি হয়ে উড়ে
ঘরে ফেরা গরুর তাড়ায় গোধূলি সূর্যাস্ত নামে
ব্যস্ত শহুরে ছাদ, নদীর উপর ব্রিজ
চলন্ত বাস ট্রেনের উসুক চোখ আর জেগে থাকা উড়ন্ত চড়
যাকে এইমাত্র  আপন করে নিলো
সেখানেও শূন্য

সংক্রামিত ভয়

যে ভয় চিরকাল সংক্রামিত ছিল আমার ভেতর
যদি গাছ মাছ পাথরে পরিণত হই

খুব দূরে বসে ভাষা বিনিময় হলো
আমি
      গাছদের
মাছদের
    পাখিদের
পাথরের একজন।
সব রূপ অঙ্গে ধারণ করে কামনার আর্তি প্রকাশ ছিলো না
সবুজ ঘাসের উপর বুনোদৈত্য হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম
কত্থক নৃত্যরত রমনীরা বাহারি-নাচে ঘিরে রেখেছিলো

যে দুর্গে আলো জ্বলছিলো তার ভেতর মানুষ নামক প্রাণি বসবাস করতো

বাজপাখি হাতে নিয়ে যে রমণী অপেক্ষারত
সমুদ্র দেখে আমি তা পাড়ি দেই নি
                মাটিতে কান পেতে শুনি সে কেমন আছে
জাহাজ-নির্মাতাদের প্রতি আমার রাগ
যখন আমার জাহাজ হলো সমুদ্র পাড়ি দেওয়া হলো
ওর অপেক্ষাও রইলো না
মাটিতে কান পেতে আর কিছুই শুনি না
সমুদ্রও তার রহস্য হারিয়েছে রমণীও তা
গাছ ও মানুষকে মাঝখানে রেখে সংক্রামিত ভয়
পাথর হয়ে উড়ে যায়।

নগ্নপাঠ

ভিজে যাচ্ছিলো
থৈ থৈ সাদা সঙ্গমে পিচ্ছিল

কাম সেও ধ্যান ভাঙ্গাতে মগ্ন প্রায়
চৈতন্য অবশ করে উল্টে যাচ্ছিলো সব

ভেড়ার পালকেরা বহুদিন হলো ছুটি নিয়েছে
কামকেতুর ঝুঁটি সমেত সেই আকড়পাখি
ডেকে ডেকে ছটফট... দানার অপেক্ষা।

কালরাত্রিরা ওষ্ঠে ওষ্ঠে সঙ্গমে বিনিদ্র
মধুও ঝরছে   

লাল ডালিমের গায়ে ভ্রমরের বিক্ষিপ্ততায়   
লিক লিকে অবশ নদী স্নায়ুর বিদ্যুতে চকিতে
গড়িয়ে যাচ্ছে কবিতা শরীর।

যথেষ্ঠ পরিমান চোষন লেহন মর্দনে স্নায়ুর কেন্দ্র উদ্দীপ্ত
বেরিয়ে যাচ্ছে সাদা বিদ্যু
জন্ম নিচ্ছে কবিতা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন