শনিবার, ১৪ মে, ২০১১

অমিত চক্রবর্তী


শৈলীর প্রতি

একটা হলুদ জ্বর, যদি ঠিকঠাক ভাবে আঁকা যায়, সঠিক আঙ্গিক ও বস্তুবিদ্যার মিশেলে যদি তাকে গড়া যায় তাহলে সেই হলুদ জ্বর থেকে একটা অসুস্থ সূর্যের উদয় নিশ্চিত। নেহাত অধিবিদ্যা নয়, চৌকষ যৌনবিজ্ঞানীর জর্নাল থেকে এইরকম জানা যায়। শিল্পশালায় আমাকে একটি ব্যালে নর্তকীর সুষম কোমর কিভাবে হাতের ভাঁজে লুকানো যায় সেই সম্পর্কে অবিহিত করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল এই নশ্বর সমুদ্রটি গায়ে জড়িয়ে নেয়াটাই আসন্ন শীতের জন্য সবচাইতে উপযোগী প্রস্তুতি। নাভিও নিঃশ্বাস নেয়, রৌদ্রস্নান করে- বিমূর্তায়নের পাঠ্যসূচী থেকে জানি। অমনোযোগী চোখেরা বিকেলকে চুপচাপ অনুসরণ করে, যেখানে অবনত আমাদের রুমালেরা উড়ে যায়, উড়ে যায় হলুদ জ্বরাক্রান্ত ঐ পারভার্ট আকাশের দিকে।

খুব সম্ভবত যেদিন এই দৃশ্যটি প্রথম দেখলাম সেইদিন থেকেই শৈলীর সাথে আমার প্রেম শুরু হয়।

 বসন্তবিভ্রাট

আমার জিভ জুড়ে বসন্তঋতু চাষ করা হয়েছিলো গতকাল। মোকাসিন পায়ে গলিয়ে যে আর্বানবালক হাঁটছিলো বসন্তক্ষেত জুড়ে সে ছিলো একটা জেলফেরত স্ন্যাকচার্মার! তার উরুতে একটি উল্কি ছিলো- প্রসববেদনায় ভোগা জাফরান রঙ সাপের। বসন্ত এলেই সে মরুহাওয়া দিয়ে ম্যাগাজিনভর্তি করে একটা অদৃশ্য জরায়ুকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তো। নিশানা ফসকে গেলে খুব ক্যাজুয়াল হাসতো একবার। পাহাড়বালিকাদের ত্বক দিয়ে যে নদী বানানো হয়েছিলো তার যোনিতে আমরা একটি স্যানাটোরিয়াম লুকিয়ে রাখতাম আর আয়তাকার এই মনিটরে দেখতাম নদী থেকে উঠে আসা ডুবুরিদের পিঠে ক্রমিক-খুনিদের হাসি লেগে আছে। আহা বসন্ত! ছুরিদের ঠোঁটে আমি আজ বসন্তের প্রগাঢ় চুম্বন আঁকছি।

আমার জিভ জুড়ে বসন্তঋতু চাষ করা হয়েছিল গতকাল। সেই থেকে আমার মুখে ফুলের গন্ধ লেগে আছে।

শববাহকের কফিন

প্রাচীন বৃক্ষের পাশে সমবেত হয় জড়তার দেয়াল
সমূহ বিপর্যয়ে কপোতীর স্বর ভীষণ প্রাঞ্জল
এবং নিভে যায় ঠোঁটের সঞ্চয়পত্রে জমানো নিয়ন
কার্পাস শয্যায় আনত লালা শিকারিরা ফলত
বন্দী হয়ে রয়েছে আজ একশত বসর
রাশিফল মিলিয়ে নিয়ে প্রাতরাশ সেরেছে ঝড়।

ঘোড়সওয়ার জানে না রুটিফলের দেশে
অপ্রতুল হর্ষে কেউ জ্বালিয়েছে দিয়াশলাই
স্কুলশিক্ষিকার লাল টিপ থেকে জালিবেত পর্যন্ত
এসে থেমে গেছে বালকদলের অনুসন্ধান
শবাগারের পাশে বেড়ে উঠে জন্মদাত্রীদের উপনিবেশ
তখন শববাহকের কফিন অপেক্ষা করে চল্লিশটা আঙুলের।

স্কারমিশ

যুদ্ধসঙ্গীত খুব বেজে উঠছে কোথাও
ক্রিমের কৌটা থেকে অনুগত ঘ্রাণ
ছ-ড়ি-য়ে পড়ছে
আমাদের সচেতন সন্ধ্যায়
মার্চ শেষ করে
হেলমেটে রোদ নিয়ে ফিরে আসছে সৈনিকদল।

আর তাব অস্ত্রোপচার শেষে
শূন্য অস্ত্রাগারে ঘুমিয়ে পড়ছেন
শল্যচিকিসকেরা। 

আমাদের সাইকেডেলিক মনোবিভ্রমের পাশে

আমাদের সাইকেডেলিক মনোবিভ্রমের পাশে
কে যেন খুলে রেখে যায় তৃষ্ণার ডায়েরি
পড়ে থাকে অনিমেষের ক্রাচ
আর সেকেন্ডের কাঁটাবিহীন ঘড়িগুলো
ন্যাভিগেটরের সামনে
রাত আসে নক্ষত্রময়তা নিয়ে
কোনো অশ্রুত হার্বারের
নিভন্ত আলোগুলির দিকে
মুখ ঘুরিয়ে নেয় বিষাদরহিত পাল
মাস্তুল থেকে খসে পড়ে
নস্টালজিক ঈগলের চোখ

আমাদের সাইকেডেলিক মনোবিভ্রমের পাশে
নীলাভ মনোপলিরা গান গেয়ে উঠে
জেগে উঠে সৌরসড়কের গ্রাম 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন