অসীম ইশতিয়াক
এর
বিকল্প কাব্যপুস্তিকা
অন্ধজ গন্দম জবা
নিভৃত মেঘ
নিভৃত মেঘ, রঙিন সুতার জটিলতায় ছুটে যাচ্ছে
জানলা খুললেই দূরে ল্যাম্পপোস্ট
অন্ধকার সরিয়ে নিঃসঙ্গ
রাত্রির নিকষ অন্ধকার মেঘ থেকে
দূরে রাখে ¾
কোনো কিছুর বিচরণ বেশিক্ষণ গোচর হয় না
জীবন্ত প্রমাণের জন্যই আমার পর্যবেক্ষণ পর্যটক বনে যাওয়া।
ভেতরকার তীব্রতা শরীরকে বাধ্য করে কামাতুর সঙ্গীতে
এভাবে অবস জ্যোৎস্না শরীর ডিঙায় প্রজ্বলিত
একদল খেয়াল নিয়ন্ত্রণহীন মনন মেঘের গায়ের বাষ্পীয়তা।
সন্ধ্যা তার ব্যথাতুর বার্ধক্যকে কিছুক্ষণ গ্রাস করে
ভারি পর্বতের নিচল অহং তার তলায় ছিল রঙিন ফুল
কিছু মানুষ তার নিজের ভেতর বটগাছ ও ইউক্যালিপটাস বনে গেছে
কেউ হরিণের চোখের মতো নিখোঁজ
বুঝে যাই চাঁদের আলো মায়াবী সূর্য পৌরুষ
সন্ধ্যার মায়াকালী পাহাড়ের গায় জীবন্ত নির্জনতা
মেঘ-পর্বত আকৃষ্ট।
কর্পূর স্বাদ
রুহ বা আত্মা হবেই হয়তো কলসের মতো
বাতাস তার বহিয়ে চলন উড়িয়ে দেয় আত্মাকে
কলস নিরুত্তাপ বস্তু, জলের ধারক
মেয়েটা বসে থাকে রাস্তায় বাতাস খায়
অদ্ভুত হিসেবি বাতাস উড়তে দেয় না
শুধু অনবরত উপযাচক কেউ
রঙিন হতে ভাল লাগে না
কষ্ট বোঝে না
কুর্নিশ নেই, এক ফোঁটা প্রেমও নেই
অদ্ভুদ কলসে আত্মা জলকে ধারণ করে
প্রতিনিয়ত আমি বুঝি ওখানে কিছু নেই
আত্মারা কলসবন্দী তাদের গায়ের রং এ উত্তেজনা
বাঁশির মন সে জানে; জলপাই রাঙা মেরুণ বৈচিত্র্যে
কিছুকেই সে ভালবাসে না।
শুধু গাছ থেকে পাতাটা ঝড়ে গেলে
অবাক তাকিয়ে থাকে¾ অন্তমিলের জন্য নয়।
এ কলস ও জল থেকে অনেক দূরে উর্ধপাতিত ¾
কর্পূর স্বাদ!
এই প্রাচীনতম সূত্র রানী হয়ে উঠেছে
পুরুষ অন্ধকারকে ভালবাসে।
আপাত সব বধির অন্ধ স্বাদহীন
এভাবেই চলে দুঃখবোধ-প্রেম-শরীর
কিছুই স্বাদ থেকে দূরে নয়।
আত্মা হয়েই হয়ত উর্ধপাতিত কর্পূর স্বাদ...
বৈমুখ বালির নর্তকী
রক্তিম রসে জমে ডালিমের কোয়া পরিপূর্ণ হচ্ছে
বাকলের ফাটল মরুর উষ্ণ চুম্বনে সিক্ত হতে চায়
সাদা বালি উড়ে নিস্পৃহ বাক তুলে নর্তকী হয়
রুক্ষতার বিরানভূমে উটের খুর ক্লান্ত
তার চোখ রাতের উদারতায় তাকিয়ে
এই কাটা বৃক্ষরা তাদের সাদা কষে বিরামতা জানালো
কিছুক্ষণ কুড়াই বিমুক্ত নিষ্ফল চাহনিদের।
কিছু মাকড়সা হালকা রৈখিক পায়ে অনায়েসে পাড়ি দিল
মরু সব রূঢ়তা নিয়ে নিস্তব্ধতা ভালবাসে
আর রসে ডুম¾ ডালিমের কোয়া ছড়িয়ে পড়ে
খরা বৈমুখ বালির নর্তকী
নাভী ও পিঠের রেখায় মরুকে ভাঁজ করে রাখে
যদি বৃষ্টির ফোঁটা বালুতে পড়ে, বালি তা শুষে নেবে
বাতাস কিছু উষ্ণতায় বাষ্প হয় অতিবিক্র প্রবল বর্ষণে
নালা ছোটে কল্পিত রেখায়¾ তার সম্মুখে
বালির গম্বুজ বিকীর্ণ আলো তাতে ডুব দেয়।
স্নায়ু আয়না
মৃত কঙ্কালকে চুমু দিয়ে ফিরবার পথে
আমি কোনো প্রেম প্রত্যাশা করি না
মাংসকে ভেদ করে কিছুই হাড়কে স্পর্শ করে না
কঙ্কাল আস্থাহীন বেদনার সাক্ষী হতে পারে।
বালুকে বিভোর নেশায় চুর লাগে স্নায়ু আয়নায়
সময়কে নিত্য দেখি লালজবা দোলে কালো অন্ধকারে
গভীর কোনো স্বস্তির খোঁজে ব্যঙ্গাচির লেজ খসে পড়ার আনন্দ হয়
আমাকে জ্বলে যেতে হয় অন্ধকারে ছাই-ভষ্ম-কঙ্কালের খোঁজ
এলাচি লবঙ্গ নিয়ে মাংসের মুখ প্রিয় কণ্ঠ খুলে কথা বলে
আরতির সন্ধ্যায় জলাঞ্জলি দেই বলির পাঠাকে
সব হাঁস কাকতাড়–য়া জানে নাড়ীতে আমি ধরা পড়ি
বাকলের ফাটলে প্রাণ নাই কঙ্কাল সবুজ বক্ষে নিয়ে।
যোগীর ধ্যানে
অচেনা পাখি ডাকছে মধ্যরাত্রির কাচ জাগিয়ে
আলোর ফাঁদে বন্দী কিছু আপন ছায়া নিজের হয়ে যায়
অপরিচিত পশুর স্বরে ভয়-কাম-প্রেম শূন্য আত্মা
নিদারুণ চাপা পড়া কষ্ট উগ্রে বেড় হয়ে আসে
পতন ও ফুলের মিশ্রিত কোনো পাটাতনে শান্তি আছে
ভ্রম ঘুরছে আশাবাদী কিছু নিঃশ্বাসে কেবলই শান্তনা
নিয়ন আলো চোখে নিয়ে সূর্যর ভেতর গিয়ে দেখি
প্রাচীন যোগী বসা
ভাবালুতা সঙ্গ ছাড়ল পাথর-ছায়া-মাছি সঙ্গহীন যন্ত্রণা
কল্পনার বরইগাছ জামগাছেরই কাছাকাছি
যোগীর ধ্যান চড়ুই এক
স্বচ্ছ উইয়ের উড়াউড়ি ধুলায় গড়াগড়ি করা ধীর কচ্ছপ
পিঙ্গল হরিণ এক পাবে কমলা ফলকে।
লাল পৃথ্বিরাজ
পিতলের বাষ্পায়িত ধূমে পুরটা আপেল পুড়ে যাচ্ছে
বোধের নিস্পৃহতায় মৃত কাঠুরিয়া নিস্ফল সনাক্ত করল
তিনটি রক্তিম পৃত্থিরাজ ফলকে বুঝলাম আত্মা-শরীর-মন
পেন্ডুলামে দুলছে আক্রান্ত করছে পিতল বাষ্পায়িত ধোঁয়াকে
বৃত্তের অর্ধেক নিয়ে এক নিঃসীম কালোতে ঝিমুচ্ছি।
কঙ্কালের প্রতিটি হাড় স্বরভঙ্গির আবেগে শরীরের মালাকে
রঙ্গ করে বলে দিচ্ছে প্রত্যেকটি নিজ স্বররতি- আত্মহত্যা
প্রেম ভিন্ন কচুপাতায় মাকড়সার ঝুলে থাকা
শিকড় খূড়ে গেলাম অজানার¾
তিন লক্ষাধিক বছর জ্ঞানরত কেউ জানে
যে মাপন তুমি করছ সেখানে কানিবক বসে মাছের ইশারায়।
নদীতে জাল ফেলে জ্ঞানী জল প্রত্যাশা করে
জাল নগ্ন জলে, জলকে স্পর্শ করে গেছে
গুহায় কলকিতে দম দিয়ে যাচ্ছ- এক কীর্তিনাশা
সাদা জলের দেয়ালে অস্ফূট মুখ আমার
ইঁদুর বাদুর ধ্বনিতে কাঁপে তিনটি লাল পৃথ্বিরাজ ফলে।
পুড়ে যায় একটি করে বাদামিপাতা
যতবার স্নান করে কেউ নদী সহবাসে
পোড়াপাতাদের এই আগুন স্নানে
জলকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে।
গহিনে সঙ্গম নিয়ে জলকে আলিঙ্গন করি
মৃত্যুর স্বাদ রক্তে নিক্ষিপ্ত বাদামিপাতার আগুন স্নানে।
অন্ধজ-গন্ধম-জবা কালো রাত্রিতে নিঃস্ব হয়ে যাও
মুক্তি নেই কোনো এক বাদামপাতার
মৃত্যুর দৃশ্য
ক্রোধের ছুরি বালিতে বিদ্ধ করি অবিরত
ঘাস তার ঘ্রাণ নেয়
মৃত বাকল ছত্রাক ক্লেদে ভিজে যায়।
পরবর্তী তিন রমণের দৃশ্য আমাকে সজীব রাখে
নাভীর মুখে লাল জবা ফোটে
উনুনে শুদ্ধ হচ্ছে মরাপাতা
এর কিছুকাল পর কাব্যকে খুন হতে দেখব
বালুর অভিশাপে শুষ্কপাতা ভেজা চুম্বন মনে রাখে না¾
বাদুর ঝুলে থাকে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে
তালমিশ্রি প্রেম এক অস্ফুট স্বরে পাঁজর ভিন্ন উড়ে চলে গেছে
সবুজ অরণ্যে করলার তিতফলে লালবীজ হয়ে জমা থাকে
অন্ধকারে নদী তুমি গাছের দেখা পাও না।
মহিষের তাড়া
কড়া নড়ছে, সব কিছুকে বাজি ধরবার জন্য
বেজন্মা জলে জীবন্ত ইচ্ছারা বিচরিত বহুদিন
বেশ্যা হৃদয়ে আয়না, সম্মোহনে নিরুত্তাপ উন্মাদনা
তাই পৌঁছে যাচ্ছি সর্বোচ্চ ভাঙনের গাত্রদাহে।
নিস্ফলা এ বৃক্ষের অন্তর্গত ভ্রুণে
মহিষ সিংহর- শিং ও কেশরে বীর্য
মজে যায় কদম কচুরিপানা
উত্তেজনা কাঠ মাটি পুতুলের শ্যাওলায়
রক্তের ঢেউয়ে অগণিত মহিষের তাড়া
জলকে ছিন্ন করে ডুবে মরবে
গ্রহণ- গ্রাস কালে সাড় পেন্সিল উতুঙ্গ তিক্ষ্মতায়
রৈখিক টানে মেরুদণ্ডকে পরিপূর্ণ করছে রূপার কলসে।
একদিন সাদা কান্না শেষে কবিতা হবে
ধারণ করা বীর্য অমরা
যন্ত্রণা তার নিজস্ব নিয়মে বদলে যায় গন্তব্যও
পুড়ে যাওয়া অন্ধকার টালমাটাল পায়ে অদৃশ্য হয়
মহিষের তাড়া কালো প্রাচীর ভেদ করে
এক বিষাক্ত কীটে সহজাত বন্যতায়
বুনো মহিষ আমৃত্যু তাড়িত অদৃশ্য হবার বাসনায়
আমি কালো পাথরে মাথা ঠুকি রক্তের লাল নহরে
মহিষের উন্মাদ তাড়া বন্যফুলের গন্ধে মাতে।
নগ্নতার উৎসব
অন্ধকার ছিলনা দৈত্যর পুরোটা শরীরে
জীর্ণ রানী তামাদী বসন্তে নগ্ন ছিল বারং বারং
মগ্ন ছিল বংশীবাদক তাকে উৎসর্গ করা হল কলঙ্ক
পুরাতন বিষ যা ছিল শরীরের কুঠরিতে রক্ষিত
সেখানে নগ্নতার উৎসব।
মৃত্যু তার ক্ষণিক ভ্রমে উন্মত্ত হয়ে উঠলে আমার পাখিগুলি
তাদের পালকে উষ্ণতার মতো উড়ন্ত মুক্ত
পরিত্রাণ ছিল না ইচ্ছামৃত্যুতে
গোঙ্গানো আর্তনাদ আমার ডানা কাটল
কিছু বিষ কি ছিল না আমার ধ্বংসকে অনিবার্য প্রমাণের জন্য
ক্লেদ স্তূপের নিচেই মৃত হাড়
আমার খুলি তার প্রবঞ্চকর সত্তা হত্যা করেছে
চোখ তুলি খেজুরকাঁটা দিয়ে
জিভ থলেতে পুরে নিক্ষিপ্ত করি সমুদ্রে
কঙ্কালের কাছে উত্তর চাওয়া হল নগ্ন খুনের অভিজ্ঞতার
এর চেয়ে জীবন্ত ছিল কাম্য মৃত্যু
দুঃখিত আজ অমাবস্যায়
সূর্য নগ্নতার আগুনে অন্ধ হবে।
উল্কিতে মাছি
শুদ্ধাতীত কোন মানুষ কুঠরি খুলে দেখল
অন্ধকারে কালো নিজস্ব বেড়ালের চলন
সামর্থের শেষ বিন্দুতে জলকে ছিন্ন করতে চাওয়া মাছ
গভীরতার সহিত মৃৎশিল্পীর পাতিল বানানো স্পর্শে
সর্বোচ্চ বোধ আবিষ্কৃত হয় সকল শর্তকে উপক্ষো করে।
উল্কিতে ভরে উঠেছে শরীর
বর্ষণের প্রতিটি ফোঁটায় পতনের দর্শন
বৃষ্টি ভাঙে মোহ শেষে এই উপভোগ সঞ্চিবনী।
কবিতাকে স্বীকার করে নিয়ে স্বচ্ছ ফড়িং টিকে থাকে
শামুকের অধীর গলায় চুম্বক স্নায়ু খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে
স্ফীত বীণে কোনো সুর থাকে না
মোহনীয় কোনো প্রেয়সীর স্পর্শাতীত অভিজ্ঞতার
নহরে ক্রন্দন লীলারত।
উনুনে পক্ষীরাজ উড়াউড়ি সমেত পাঁজরে লুকানো
রঙিন ফলের গা বেয়ে নেমে আসা ঔজ্জ্বল্য ধরা পড়ে
গভীর ক্রন্দনের নিজস্ব ভঙ্গিমা থাকে
মাছির পাখার শব্দ মস্তিষ্কে অনুরিত
একখণ্ড জ্বলন্ত কয়লা পাজরে প্রজ্বলিত
উল্কিতে ভরে উঠা মাছি তুমি কেন একক চিল হও!
গোবরেপোকা
গোবরে পোকা তোমার আবাস স্থল
পরিত্যাক্ত নারীর যন্ত্রণার মতো
চৈত্রের দ্বিতীয়দিন বাঁশ ঝাড়টার আউলা ছায়ায়
পাড়ার নতুন বউ প্রজাপতি হয়েছিল।
ভিক্ষা মাগার মতো তোমার প্রেম
আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়
গোবরেপোকা তোমার আবাসস্থল।
নিদান বসন্তে অগণিত পালকের আশ্রমে
সুউচ্চ বৃক্ষের অনাথ ডালে নিরিহ কালো শান্ত শকুনের স্বরে
উষ্ণতায় রবে, কামনায় থাকি জোনাকির চোখে জ্বলে
শূককীট তার মাটির প্রলেপ ভেঙ্গে ফেলে
কালচে কলাগাছও বাকলের আড়ষ্ঠতা ছাড়ে
দুর্বিনিত কামনার আশ্রমে আমরা প্রজ্বলিত হই
মরা শকুনের মৃতচোখ বহু চেনা মজা ডোবায় ভাসে
তা উপেক্ষা করে সবুজ বাঁশের পিঠে প্রজাপতি সঙ্গমে।
গোবরেপাকাদের সাথে খড়ের আচ্ছাদনে খোলা হাওয়ার
অন্ধকারে পূর্ণ চাঁদের আলোয় পরিত্যাক্ত কালো প্রাচীরে মাকড়সার জালে
এক শঙ্খ সাদা দূরত্বে- রোদের আউলা ছায়া- বসবাস করি।
গোবরেপোকা তোমার আবাসস্থল প্রজাপতি হয়েছিল।
চুনাবালির অবয়ব
চুনাবালির অবয়বে যন্ত্রণা খোদাই করি
উত্তেজনাহীন ক্ষরণে ক্ষয় দিয়ে মূর্তি বানাই
শরীরে গাঁথি গোপন ঢল।
বহু পুরান এই বিমূর্ত আবক্ষ “চাঁদ-রাত্রি-গুহা”
তীব্র এই চুনাবালির অবয়ব।
হাতে আমার ক্ষতের টুকরো
শব্দ করবার জন্য আগুন ধরাবার জন্য নয়।
আমি দেখলাম সমুদ্র, আমি দেখলাম মৃত মানুষ
তোমার দোতলা মর্মর শরীর আমি বাজাই
ক্ষতের টুকরোগুলি নির্জীব পাথর হতে পারে
আমাদের শরীর হতে পারে চুনাবালির মর্মর।
প্রাচীন ক্ষুধা-মৃত স্থবিরতা দিকভ্রান্ত হয়ে ওঠে
তোমার বিমূর্ত চুনাবালির “চাঁদ-রাত্রি-গুহা” অবয়বে।
খুব প্রাচীন দুঃখবোধ
ঝিঁ ঝিঁ পোকার আত্মা
আত্মার শরীরে আক্রান্ত ঝিঁ ঝিঁ স্বর
পেচট স্বর ছায়ার অন্ধকারে আলিঙ্গন করে
স্পষ্ট কেউ উটের থলেতে ভালবাসার উষ্ণতা আনেনি
বিস্মৃতি কেঁপে ওঠে
মৃত্যুর অন্ধকার খোলসহীন
আস্থাচলে দোলে অবলম্বনহীন ঝিঁ ঝিঁ স্বর
পরিপক্কতার রং ধরে আসে
বিচ্ছুরিত মাছি ডানার বিচ্ছুরনে মরে গেল রূঢ়তায়
সাদা ফুল কাটবে
মৃত কোনো সংগীতের দেহ।
জবায় তখন প্রখর রৌদ্রর বিচূর্ণ আহ্লাদ
বেদনার চেয়ে গাঢ় কোনো স্মরণ থাকে না
তোমাকে সর্বোচ্চ বেদনার স্পর্শ দিয়ে
খুব প্রাচীন দুঃখবোধ উটের থলেতে ঝিঁ ঝিঁ স্বর ওঠে।
যন্ত্রণাবিদ্ধ কাকতাড়ুয়া
লাল পায়ে হেঁটে গেছেন সন্ন্যাসী
সাদা কষে পিতল, লাল কাকড়াকে মনে করে
সাদা টিকটিকি-বাদামি পোকা-ছোট্ট ফড়িং
ধূসর মরাটে পিঙ্গল মাছের পুচ্ছ
লাল লাভা নগ্নতা।
বোবা হাতির দাঁত- হলুদ গাধা
কাঁদলেই সুগন্ধি ছড়ায় সন্ন্যাসিনী।
কাকতাড়ুয়ার বিমর্ষ রক্ত
সবুজ হয়ে ওঠে।
বীর্য কান্নায় রূপান্তরিত হয়।
পিংপং উলম্ফে স্নায়ুর কাকতাড়ুয়া কাঁপে
মহীরূহ যন্ত্রণাবিদ্ধ সূক্ষ্ম কাকতাড়ুয়া।
ব্যাঙের ওষ্ঠথলে
বিদীর্ণ আক্ষেপ জমে থাকে- শুষ্ক পাতায়
মৃত বাকল অন্ধ মৃত রঙে বিদীর্ণ
সুরা পানে ব্যস্ত পিঙ্গল চড়ুই।
মুখ তুলে বলে চাঁদ কি এক অনাবশ্যক ডুমুর
অদৃশ্য হয়ে ফিরে আসে-
ব্যাঙের চোখে এক প্রাচীন অমোহনীয় কালি
ওষ্ঠথলেতে মৃত রং- পিঙ্গল কামনা
খড় তাতে অসহ্য নিপীড়নে ভোগে
গহ্বরে জমায় কয়লা
ঈর্ষাকাতর কয়লার লাল দাহ্য নহরে
উষ্ণতা।
ব্যাঙের ওষ্ঠাগত থলেতে বিদীর্ণ আক্ষেপের বিষ
ধূসর খড়ের গ্রহ বৃষ্টির শান্ত আহ্লাদ
ব্যাঙের কালো চোখ মিশ্যতায় ভোগে
অমোহনীয় কালি মৃত রং পিঙ্গল চড়ুই
ওষ্ঠাগত বিষ নিক্ষিপ্ত হয়
বৃষ্টিরা নাচে ভয়াল কদর্য আমোদে
পাতারা ক্লেদে হলুদ হতে শুষ্ক হয়
পৃথিবীর স্থিতি নিয়ে ব্যাঙের ওষ্ঠথলেতে আক্ষেপ পুষে রাখে
নেই জেনে বিদীর্ণ হয় মৃত বাকল অন্ধ মৃত রঙে
লবঙ্গ
প্রজ্বলিত আগুনে লবঙ্গ পোড়াই
এক একটি লবঙ্গ আগুনের আভায় পোড়ে
তারই দূরাগত প্রভায়
একটি সফেদ কাগজে পোড়া রং ধরে
তর্জনী ও বৃদ্ধাআঙ্গুলে লবঙ্গ
একে প্রজ্বলিত করার গোপন আয়োজন
প্রকাশিত হয় আগুনের লেলিহান গাত্রদাহে।
পুড়ছে লবঙ্গঁ তারই প্রভাবে বহুদূরে
সযত্নে রক্ষিত তুলট সফেদ কাগজে আগুন লাগে
গোপন লুকায়িত ব্যথাতুর সক্রামনে।
সুক্ষ্ম বাঁশপাতার তীর্যক আঁশের ঘর্ষণে
মৃদঙ্গ বাজে সবুজ শঙ্খে নক্ষত্র দূরত্বে
লবঙ্গ পোড়ায় কাউকে
তাই পুড়ে যায় মলাট কাগজ দূরাগত দৃশ্যে...
হাওয়াই মিঠাই
গোলাপী হাওয়াই মিঠাইয়ের সম্পূর্ণ স্পর্শে
বিদ্ধ দণ্ডের নির্জলা যন্ত্রণা
মেরুদণ্ডে অনুরিত হয়।
নিজেকে ক্ষরণ করে এক পৈশাচিক স্বাদ
পুরোটা মিঠাই নিঃস্ব যাজক।
মেরুদণ্ডের সবুজ বাঁশে পই কাটি
তামাটে মুদ্রা জমাই।
তার কিছু তামাটে মুদ্রা নিরুদ্দেশে ছুড়ি
ধানগাছ দুলছে অবিমিশ্য হাওয়ায়
শিকড়হীন নিস্তব্ধ কেউ সনাক্ত করে
গাছেরা ভিন্ন, শিকড়েরা ভিন্ন- প্রতিটি
একক গাছ দুলছে- মিশ্যতায় শিকড়হীন গাছ
বাতাসের মসৃণ জড়াজড়িতে।
পাথর স্থির জলে নিজের প্রতিবিম্ব ভাঙে
মুদ্রা সম্ভোগ করি অবিমিশ্যতার ।
হাওয়াই মিঠাই উজ্জ্বল রোদে মসৃণ বাতাসে
ভয়হীন-ভরহীন-শূন্য প্রেম স্পর্শ অন্ধকার।
ডুমুর
ডুমুরের ফল নিরুত্তাপ বহু টুকরো মেঘকে
কাক্সিক্ষত মেনে জলের গা ছুঁই কবিতায়
চাঁদ মেঘ হলে এর উত্তাপ
আমার শরীরকে পুড়িয়ে মারতে জানে
ভাসমান মেঘ নিরুত্তাপ ডুমুরের ফল।
ডুমুর সৌন্দর্য ছড়ালে
মৃত মানুষ আত্মা হতে চায়
কঙ্কালের হাড়ে খুনে মাছি নাচে
খুন হয় ভবের বংশীবাদক।
খুব ধৈর্যের সাথে ডুমুরের ফলে ক্ষুদ্র ভালবাসা দেখি
ধুন্দলগাছে ঝুলে রয় অবিমিশ্য কাল জুড়ে
রক্তের নোনা স্বাদ নিয়ে উভ্রান্ত রোদ অন্ধকার হলে
কালো কুয়ার গভীরে প্রেমিকার সাথে মৈথুনে থাকি
সে প্রাণ সঞ্চার করে আমার পাঁজরের অন্ধকারে
এই ভ্রম রূপান্তরিত হয় -
কাঠুরিয়াকে উঁইপোকার স্বচ্ছ মৃত্যুর উৎসবে রেখে
উইপোকা- কেন একবার রমণে মরে যাও!
মেহগনিফল
বীণ থেকে সুর মুছবার আগেই ক্ষত আবি®কৃত হয়
সুরকে পরিপূর্ণতাও লাগে
মৌমাছির ক্লান্তিতে পরিষ্কার মৈথুনের প্রার্থনা
প্রতিবিম্বে নিজের মুখ বিতারিত হয়
অপারগ অক্ষমতায় আক্রান্ত আমি জড়তায় ভুগি
ঘৃণা করি নিষ্ক্রিয় শালবন
কুকুরেরা স্তব্ধ আঁধারে সতর্কতা কণ্ঠে প্রকাশ করে
মোহনীয় মেহগনি খোলা নিমন্ত্রণ জানায়-
আমি সম্ভাষণ পছন্দ করি ।
তোমার পরিপূর্ণ অন্ধকারগুহায় গ্রাস কর
অন্ধকারে নিজের মুখ অপরিচিত ঠেকে
ফুলকে অস্বীকার করা যায় না- নত হই
অর্বাচীন কাকতাড়ুয়া প্রেমিক বা মানুষ নয়
আত্মারা দাপায় শালবন নিস্প্রভ
অপারগতায় ফেটে যায় মেহগনিফল
বিদ্যুৎ পেতলের শরীরে ধরা দেয়
বাজপড়া- মানুষ।
পাখিরহস্য
আমি লাল বিক্ষিপ্ততায়, বিচ্ছিন্ন আত্মায় পরিণত
পাখি রহস্যের অনুসন্ধান করি
শ্যাওলা হলুদ পাখি
চাঁদের রহস্যর বাসনায় নগ্নতা স্নান করে
ঋতুদের বৈচিত্র নিয়ে পর্বত খুঁজি
প্রাচীন গুহার মিথলিপিতে
কালো পুরুষের বাঁ-পাঁজরে রক্তাক্ত লাল জবার মোহর চিহ্ন ছাপ
নীলাভ সাদা নারীর কটীতে উড়ন্ত এক চিলপাখি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন