শুক্রবার, ১৩ মে, ২০১১

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য


পাখি ও পাপ

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য রচিত কিছু কবিতার একটি বিকল্প পুস্তিকা
  

০৬০১০৯

পরস্পরের আঙুল ছেড়ে যাচ্ছে নখ ও নখর
করতলে বপন করছি উসবের জীবাশ্ম
বপন করছি সূর্যাস্তের ক্লেদ আর কদাকারমেঘ
মৃতঘাসের ছায়ায় মাটি আর পিঁপড়া চক্রমন

উত্তরের দেয়ালে কলেপড়া ইঁদুরের ত্বকের রঙ
হাওয়ায় কর্পূরের শাদা শাদা ঘ্রাণ ক্রমে বর্ণহীন
আমাদের পাঁজর একই দেয়ালের জারজ
আমরা বিভেদ হচ্ছি ট্রাপিজিয়ামের রেখা ধরে 

০৪০৩০৯

চলো নেশা নর্দমায় নেমে ধুয়ে ফেলি দৃশ্য
পাথরের কাতর কীট ও কিরীট
হরিতকীর দেশে নিশিক্লান্ত রাত
হাতের ভাঁজে ফেঁপে উঠা শিশিরের ক্লে
বাহুমূলে টেনে নেয়া জারজ লোবানের ঘ্রাণ
চেতনার হলুদ রঙ ধুয়ে ফেলি এসো

চলো নেশা
ভাগ করি পুরনো পালঙ্ক
পালঙ্কের ঘেরে পরগাছা শীকার ও খুনসুটি
নৌকো ভেঙে ভাগ করি আঘাটার নদ
খাড়ির নিচে থকথকে তরল রোদের বাছুর
যাকিছু পারাপার এপার ওপার
ভাগ করি এসো শ্মশানে গীত গান থেকে সুর

০১০৩০৯

সিসিফাস তোমার রোদের শহর ভুল স্বপ্নের উপপাদ্য
যে পাহাড় ও পাথরের ঘ্রাণে ও পরিক্রমায় শুদ্ধ হয়েছিলে
এখন পুনর্বার তোমাকে ডাকে পাথর
এখন পুনর্বার তোমাকে ডাকে পাহাড়ের দাঁত ও নখর
তুমি বৃত্তের পদলেহি
তুমি অবিনশ্বর

তোমাকে রোজ আয়নায় দেখি
তোমার চুলে সিঁথি কাটি
তোমাকে দাঁত দেখাই

পকেটে ময়লা ছেঁড়া দুটাকার নোট ডানা চুলকায় অস্থির
তার বুকে দোয়েল ও শহিদ মিনারে খুশকি ও উকুন
তোমাকে তারা নপুংসক শুয়োর বলে গালি দেয়

আমার আয়না ভেঙে তুমি বেরিয়ে পড়ো
পাথরটাকে ঠেলে তুলো পুর্নবার
সেঁটে দাও পাহাড়ের হা করা মুখে চিরদিন
তারপর
তুমি আর আমি দোয়েলের কাছে যাবো রোদের ডালপালা
তারপর আমরা দুজনে শহিদমিনারে নতজানু কঙ্কবালক

সিসিফাস তোমার রোদের শহর ভুল স্বপ্নের উপপাদ্য

১১০৪০৯-২

গোর খোদকের চোখে ক্লান্তি
তারপরও কোথায় পায় পলাতক নক্ষত্রদল
হাতের ভিতর রোদের বাহন সারারাত

কী খুঁড়ে সে জানে নি একদিনও
মাটি তাকে বলতে চায় ইতিহাস
সে অন্ধকানে শুনে ফেলে ঘুমপাড়ানিগান

১২০৩০৯

কেনো বসে থাকি এই নিস্তাপ টেবিলে
চোখের ছুরিতে দৃশ্যগুলি চিরে চিরে দেখি
ডানপাশের হাওয়া ভেঙে বাঁপাশে সাজাই
কুকুরের চোখে বিহ্বল তন্দ্রা নামে
বিড়ালের চোখে বিহ্বল তন্দ্রা নামে
আমার চোখেও

ছায়ারা প্রলম্বিত হয়ে ক্রমে লুট করে রাস্তা
এই কাক এই উপবন বিস্তারিত বর্জ্য
ঘুমঘুম ঘ্রাণ ছিঁড়ে যেতে চাই
কে তবে গন্ধের উস সন্ধান করে
কেজন বসে থাকে এই নিস্তাপ টেবিলে
দূরে বসে বিলাপিত বয়েসী মাতাল
প্লাটফর্ম ছেড়ে চুপিচাপ নেমে পড়ি
বুকপকেটে দুপাটি রেললাইন নিয়ে ফিরি

আমার নিঃশব্দ ট্রেন আসবে
আমার নিঃশব্দ ট্রেন আসবে

২৪০৩০৯

ভুলের বয়স কতো তিনি জানতে চাইলেন
আমি কামনার শীতে ফিরে গেলাম
হাতড়ে পেলাম বনছাপ ধুতির পুরাণ
তাকে বললাম বয়সের জিবে ধনুকের বিষ
তিনি আনমনে চোখ বুজে ভিজে গেলেন
তার ভেজা ত্বকে কিরীটঝিলিক
তার দাঁতে মাংসের হাড়
বিপণন শেষে জায়নামাজ বিছানা
বালিশে রূপালি আযানের দাগ
তার শিরায় মেঘডম্বর

পিতা এই বর্ষায় তোমার রক্তের রঙ শাদা

২৯০৩০৯

কাল যদি দেখি উড়ে গেছে নদী ও নরক
নরকে নিঝুম বালুঘর আর বালির কবর
কারো সধানে নেই কেনো নিরাময় পান
জ্বরের ঘুড়ি উড়ে পূর্বের বিপরীতে পুড়ে
ওখানে দিগন্ত জ্বলজ্বলে কাঠকয়লা হলুদ
এতোটুকু বুদবুদ উঠে মিলিয়ে গেলো
শ্যাওলার প্রাণে গোপনেই প্রভাতসকাল
কাহাদের প্রথাগত রাত কাদের বাগানে
বোশেখের পুবে এখনো ঢলঢলে গাছছল
গাছও কখনো ছলনার ভাষা শিখে বৃক্ষ
পেছনবনে সহবাস রেখে ফিরে একরাত

ফুলচুষিপাখিদের চরে লেগেছে পুষ্পমড়ক
কাল যদি দেখি উড়ে গেছে নদী ও নরক 

৩১০৩০৯-২

শূন্যতার পরিমাপ জেনে খুলে যাবো শিরাসুর
কে জানাবে কে জানাবে
এইখানে এসে খুলে নাও মাইল মাইল রোদ
ভয় ভয় দুপুরের বনে গিয়েই হারালাম আঙুল
চুলে তখন আরণ্যক নির্জনতা
বাতাসেরও ঠাঁই নেই

খুলে নাও চুল রাতজেগে ভূমিচুর যতো বকুল
শূন্যতার পরিমাপে খুলে দেবো একটি আঙুল

১১০৪০৯-১

বহুদিন পাতা ভেঙে ভুলে যাই অরণ্যের চুল
আঙুলে অমরতা নিয়ে আর কুড়াই না বকুল

রিকশাটির পাশে পাশে উড়ে হাঁসগুলি তার
চিরতার ভোরে পান করে বাতাসের নির্যাস
দূর বনে ভরে যায় ঝোপ কানাকুয়ার ডাকে
নিবিড় ক্ষতের প্রপাতে অধরলগ্ন মৃত্যুর ধস

চিনে নিও চিনে নিও প্রিয় আমাদের কাল
ছাই ছাই আগুনের ভাঁজে যাপিত নিধনসুর

তিনফোঁটা জোছনার কেদ মেখে নিও ত্বকে

১৮০৪০৯-২

যে বাতাসে ভেসে তোমাদের দেশে আসি
কিছু মদ আর বিষাদ জমিয়ে রাখি
বাতাস ঝড় হবে না বলে আমাকে ভাসায়
আমি উদ্ভ্রান্ত দিনের পেটে ঘুমিয়ে থাকি
কাঁথার ভিতর জেগে থাকে রোদের পাথর
তার উত্তরে ছিলো দীর্ঘ রাতের ইতিহাস
তোমাদের দরোজায় ডাকে শাদা রাজহাঁস
এই ভেবে আমি জেগেছিলাম চারশোবছর

ঘুম ভেঙে গেলে বুকে রেখে ফুল ও ছুরি
সহোদরা ও প্রেমিকার মৃত্যু কামনা করি

২১০৭০৯

ছায়ার ভিতর পাথরও কাঁদে একা একা
উদ্ভিদের ফসিল কে কবে ভিজে যায় জ্বরে
এই অমরতা নিঃসঙ্গতার পরিণাম জেনো
এখনো দুয়ারে দরজার কড়া নাড়ে হাওয়া
হাওয়ার হাত কখনো বাতাসকে ছুঁয়ে যায়
এখানে দুফোঁটা মদ চোখ হয়ে আছে
মদের ভিতর কৃষ্ণপক্ষ গাঁথা
তোমার পাতায় অবরোহী শিরা কাঁপে

আমার আকার পৃথিবীর প্রথমরেখায় সাধা 

 ১৬১২০৯-২

সে ছেড়ে গেলে প্রলম্বিত হয় ভাগাড়ের পরিসর
সে কি তবে রাতভর জেগে ভূত শিকার করে
তুলতুলে ত্বকে শ্যাওলার বিস্তার চিনে চুর

একটি উদ্ভিদ বেড়ে বেড়ে নুয়ে পড়ে এখানে
কান্না আর উল্লাসের প্রতিবিম্ব ধরে বেগুনি কীট
সে আর লিখে নি সজলপত্র হরি শয্যাগন্ধ
ধীরে ধীরে প্রতিস্থাপন করে সূর্যের ভিতর সুধা
ধীরে ধীরে রাত ভেঙে কয়লার পাশে রাখে
কয়লার প্রেত পেছন ফিরে তাকায় ধিকিধিক

আমি দাঁড়িয়ে থাকি সুন্দরের বিপরীতে থির
ভাগাড়ের ইতিহাস অর্ধমিথ্যা হয়ে উদ্গত হয়

১৭০৯০৯

ঝর্ণার গন্ধ ছুঁয়ে থাকি কেবল নিজের ভিতর
চারশোবছর কেটে গেছে
এই কার্বনহাওয়ায় শঙ্খনাদ শুনি শঙ্খচুর
কাঠের চাকা ভেঙে লোহা
লোহার চাকা ভেঙে কীসব চক্রবর্তী ঘুরে
নিদঘুমে ধূলিপড়া পাতার জালে চোখ রাখি
ওগো চন্দ্রমল্লিকা কেনো ছাদে জেগে রাতে
ছাদের টবে জমে উঠে বৃষ্টির শব
শবকাতর যন্ত্রণায় কালো হতে হতে হাঁটি
আমার নখের ভাঁজে পলির গন্ধ এখনো নদী

মুঠোর ভিতর ছাই নিয়ে জাগি
মুঠোর ভিতর চনমনে রোদ ডানাভাঙা ভুল
দেখি পাথরের মাঠ পার হয় বালিকাদল
স্কার্ফভর্তি ফেনায়িত স্কুল আর কলম
হাত নাড়ি সিটি দিই
ওরা তো থেকে থেকে কান্নার বনে জুঁইটুঁই
আমার কুঞ্চিত আঙুল ভাবে গন্ধের ওম
চারশোবছর গরাদে দাঁড়িয়ে ভাবি নির্ঝর
দুপায়ে শিকড় হবে বনষ্পতির মায়া

ঝর্ণার গন্ধ ছুঁয়ে থাকি কেবল নিজের ভিতর 

০২১০০৮

এমন এক গহ্বর আছে যার কোনো তল নেই
এইখানে বন্দি থাকে অধকার
ন্ধকারের কোনো চোখ নেই
সুতরাং অন্ধকারের আকার কল্পনাতীত
এই গহ্বরে আলোর প্রবেশাধিকার নেই

এই ব্যাপারে আমরা জন্মান্ধ

২২১০০৯

সন্ধ্যারঙ পশুগুলি ডাকাডাকি করে সমস্ত সময়
তারা লুকিয়ে থাকে
তাদের গায়ে জড়ানো সন্ধ্যা সাতটা তেরো
তাদের পায়ের নখে ধ্রুবলাল উপকূল অভিলাষ

কোরাসের অন্যপিঠে নিঃসঙ্গ এক কথার যাদুকর
কোরাসের অন্যপিঠে নিঃসঙ্গ এক কথার যাদুকর

অথবা দুঃখবোধ তাড়িত করে তারাবাতি
ক্ষয়িষ্ণু পশুর পাণ্ডুর লোল আর গন্ধ
যাদের দাঁতে চিন্ময়গুল্ম আর ছালসর্বস্ব আত্মজ

২৫১০০৯

বাতাসে ঝুলে আছে ছায়া
ঘাম জমে ক্রমশ বরফ
তারা অন্তরালের সুতো খুঁজে ফেরে
তারা পরস্পরকে স্পর্শ করে ভ্রান্ত

তারা চাদরের ভাঁজে লুকিয়ে রাখছে লাল
দুইটি বালিশের ভিন্নবসন তাকিয়ে আছে
আলো ডুবে যাচ্ছে মেঝেতে
তারা কান্ত পরস্পর দেখছে নিজেদের

একজনের ঠোঁট নড়ে উঠে শব্দহীন
তারা পরস্পর গুজে নিচ্ছে ঠোঁট ও সধ্যা
শহরের বাসগুলি কচ্ছপ
তাদের ছায়া পরস্পর চুম্বনরত

তাদের চোখ মরামাছের স্মৃতি
বাতাসে ঝুলিয়ে রাখছে ছায়া আর শরীর
দেয়ালের ফাঁটলে অন্ধপথের রেখা
তারা পরস্পর নাম জানে না খাড়ির

১২১১০৯

কার কান্না শুনছো এই পরিক্লান্ত রাতে
সে ভান বুনে পালিয়ে যায় খরার দেশে
আমি খরাসহ এইসব কান্না তমালে

সে মিথ্যার ভিতর রূপ পরিগ্রহ করে
সে মৃত ক্রমে রাত্রির পাতায় সাজায় নখ
আকাশ এবং আলোকে অস্বীকার করে

আমি রঙ পান করি আমাদের কুয়াশায়
সে অস্তিত্বহীন জেনে রঙধনু ভাঙি 
সে আসে কবর এবং হাসির অন্তরালে

একদা পাগলাগারদের দ্বার ভেঙে ছায়া
ছায়াবাড়ির মেঝেতে তুমি খোলাখাতা
আমি যতো অবিন্যস্ত অক্ষর অভিমান

১৪১১০৯

দেয়ালের বিপরীতে খালি ক্যানভাস
চাইলে একটা রেখা টেনে দিতে পারি
আমার চোখ সবুজ এবং চুল সব শাদা
একটি দীর্ঘশ¡াস পার হলো নলের বন
ক্যানভাসটি পুরনো হলো বহুকাল

অনেক গভীরেই আছে নকশার আকর
কর্কটচিহ্নে বিষণœ বৈঠাল ঘুরে আসে
দেয়ালে আয়না আছে ঘৃণার প্রতিবিম্ব

১৫১১০৯

ভুল জানলায় বসেছিলে ওগো হাওয়া
গান ভিতরে বেজে যাচ্ছিলো অবিরাম
যন্ত্রণা আর ঈর্ষা প্রকাশিত হচ্ছিলো
রাগ আর ক্ষোভ বুনছিলো মাকড়সা

তারপর ডানহাতে রাস্তাটি খুলে নিলাম
রোদ কেটে একটি বিছানা বানালাম
শীতের কাঁথা তেজপাতা ফুলের ভ্রূণ
আর নরকে বাজালাম ত্রিশইঞ্চি এস্রাজ 

১২১২০৯

জানলা ছিলো না বলে কারো চলে যাওয়া দেখি নি
ধূলিহাওয়ায় তার পদচিহ্ন শুধু নিঃশ¡াসে ছিলো
আহত দিঠিতে সবুজ আলো এসে বলেছিলো বন
সারাদিন বনে বনে হয়ে থাকি বনজ্যোস্নার ঝোপ
এখন জানলার মায়া আর পোড়ায় না চোখের পাড়
সকল ঘুম ভেঙে গিয়ে এইখানেই জাগরণ আবার

ঘুরে ঘুরে সরে যাই একা চিহ্ন আর শব্দের খোঁজে
ঘুরে ঘুরে সরে যাই আমি আমার শরীরের সাথে 

 ০১০৮০৮-৩

ভোররাতে নিঃশব্দে আসে ট্রেন
থামে কুয়াশার কোল চিরে
ভিড় নেই যাত্রিদল শ্মশানের ছাই
শাদানিঃশ্বাসে স্বপ্ন পুড়ে দূরে
এইসব ভেবে ঘাসের ছায়ায় থাকি
ঘাস ছিঁড়ে চরাচর অন্ধজোনাকি
  
১৩১২০৯

কেবল তুমি এক এবং একলা চিরদিন
আমার বুকের হিরন্ময় পাথর
খুন করো আরাত্রি নক্ষত্রের ইন্দ্রজাল
তিক্ত পুষ্পরস ও কমলার রঙ

প্রিয়তম পাপ জাগরণের ভোর হয়ো
ডুবো ডুবো সন্তরণের ধারে সীমাহীন লাল
একমাত্র অনুষঙ্গ যাপনের
চোখের ফাঁক গলে আসো দুরন্ত আঙুর বাগান
সকল স্পর্শের লিপ্সায় খুলে দাও ক্ষরণ
আমি না করবো না

তোমার সাথে কীভাবে
বরং তুমি আসো তুই আয় সময়
কাল এবং কাল হয়ে আয়
ফসলিজমিতে খরা বুনে দিই
মৃত্যু আর সোনালি মড়ক বসন
পাপ তুমি সুন্দর প্রিয় রৌরব

এখানে কেউ অদীঘল নিঃশ¡াসে একাকার
আমার দীর্ঘশ¡াস দিগন্তকে পরিব্যাপ্ত করে
অমারাত্রি নিয়ে এসো
তোমাকে দেবো দীর্ঘশ¡াসের অক্ষয় পাথর

 ২৮০২০৮-১

একটিরেখার ভিতর দিয়ে হেঁটে গেলে
ভেঙে পড়ে রেখা
নিঃশ্বাস ভেঙে পড়ে

বিস্তীর্ণরাত রাত ঝুলে থাকে চোখের নিচে

২৮০২০৮-২

সকাশে ঘুলঘুলি আলো উত্তর
শেষগ্রাম শেষযাম ধীর
কাকের পালকে সুপ্ত যাকিছুউপাখ্যান
ধান আর গান

২২১২০৯

রাতে এসে এঁকেছি একাকী একটি গানের ঘ্রাণ
এখানে যাকিছু পরিযায়ী সুর ছিলো ছড়ানো
শাদা ক্যানভাস আমাকে নিলো অ
শাদা ক্যানভাস আমাকে নিলো অধ মাধুকর

আমি একটি কান্না আঁকতে চেয়ে গান
ক্যানভাস আর শাদা হবে না
রাতের গাড়ি চলে গেছে আমাকে রেখে
গাড়িটির হৃদয় ধাতবপ্রাণের পরে ঝুলকালি
এই কালো শহরতলিকে মুড়িয়ে রাখে
শূন্য নদীতীরে আমি বালির বিভাস
আমার বুকের ভিতর কারো নিঃশ¡াস চুর
কে আমাকে বিভাগ করে বিবাগী ভাঙন
দ্বৈত হৃকম্পনে একাকার সিলিকন

কেউ কি ভাবছে আমাকে
যদি কেউ আর কারো সাথে না বলে কথা
যদি কেউ গোপনে এঁকে ফেলে রাতের কবিতা
যদি কেউ উড়ে উড়ে উড্ডীন কোজাগর
যদি কেউ পুড়ে পুড়ে জানলাহীন ঘর

কেউ কি আমাকে ডাকছে
সে তার নিজের ভিতর ভেঙে দেয় সাতস্বর যদি
সে আর বালিশ কেঁদে কেঁদে জলকৌড়িল নদী

আমি কি তাকে শূন্য করি নি একা
আমি কি চোখের ডালপালা ভেঙে বানাই নি পাখা

১৮০৯০৮

রোদে ভাঙা দুপুরে নিজেকে পেলাম
একা হাতে একা সমুদ্র জমালাম
তারপর পিঠজুড়ে শীতকাল এলো
গলিপথে নক্ষত্রের দেখা পেয়ে অবাক
আমি চুপিচাপ ঘুরে ফিরে আসি
ফেরিঅলার ঝাপিতে লুকিয়ে থাকি

২৩১০০৮

যখন তাদের ঈর্ষা করি
শুয়ে থাকি ঘরে
যখন খালি হয় চোখের বিবর
রেখার শরীরীবদল বৃত্ত তৈরি করে

০১০৮০৮-৪

আমি দেখলাম তাদের সৌকর্য
দেখলাম তাদের ভাবালুতা নির্লিপ্তসুর
আমি তাদের উন্মোচিত দেখলাম
তারা গোর খুঁড়ে নিঃসঙ্গ
তারা গোর খুঁড়ে ভোরের শরীরে
ভোরের শরীর ভৈরবীস্বপ্ন
আমি সপ্তবন্ধগানের কারুকাজ দেখলাম
তারা মূলত কাকে সমাহিত করবে 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন