শনিবার, ১৪ মে, ২০১১

তানভীর আশিক


সময়ের হাড়ে ঢাকি মুদ্রিত হরফ

০৫
শূন্যতা পরিপূর্ণ। পোড়খাওয়া অন্ধ আকাশ নিটোল স্তব্ধতায় ক্রমাগত বিবর্ধিত। সত্য ধারণ নিদেন পক্ষে অর্জিত মুখোশ। আর প্রতিটি মুখোশ পরিবর্তিত হয় নিস্তরঙ্গ সত্ত্বায়। সাপেক্ষে তা ছড়িয়ে পড়ে; আর সকল তরল বৃত্তাকারে ব্যাধির মতো ছড়ায়।
মনে করুন প্রতিটি চিহ্ন, প্রতিটি প্রতীক নিঃসীম বিলীন হতে হতে ফিরে আসছে, আর তা মুদ্রিত হচ্ছে কটিবন্ধে। তাকে নিলীন করে দেয়া যেতে পারে যখন ভিজে যাবে অন্ধকার - যখন স্নাত হবে চারপাশ। 

০৬
একটি বাঁশ পাতা সোনালি হয়ে ঝরে যাওয়ার কালে স্মরণ করে প্রথম সবুজের স্মৃতি। শোকাতর সবুজেরা করুণ মৃত্যু সুরে নৃত্যরত। এ নৃত্য তাঁকে আকৃষ্ট করে না, তাঁকে স্নাত করে না বিহ্বল সুর। তাঁর প্রথম বাতাসস্পর্শ অনুভূতি, তাঁর বেঁচে থাকার ব্যাকুল আনন্দের নৃত্যের স্মৃতি তাঁকে মোহিত করে রাখে; এ বিদায় লগ্নে তাঁর স্মরণ হয় প্রথম সূর্যস্পর্শ অনুভূতি। আর এ অনুভূতির চরম পুলক রুমন্থনে ঝরে পড়তে থাকে সে: বিকেলের উজ্জ্বল রোদ, মৃদু বাতাসে করুণ সুরের মুর্ছনা আর বেঁচে থাকা পাতাদের শোক নৃত্যে ধীর লয়ে ঝরে পড়ে পাতাটি আর ম্লান হতে থাকে তার মৃত চোখে জ্বল জ্বল করে বেঁচে থাকার আনন্দ।

০৭
অস্তিত্ত্বের যন্ত্রণা যথেষ্ট ভয়ানক। তীব্রগতি মস্তিষ্কের গহীনে দানাবাঁধা বীজ। কখনো সুতীব্র নীল, কখনো সবুজাভ আবার কখনো লাল রক্তের মতো ছুটে যায়। এবং দম বন্ধ হয়ে আসার মত ছটফটে উজ্জিবন বিমোহিত করে। এসব অন্ধকার অথবা আলোর ঝলক আমার মস্তিষ্কের অর্ন্তগত।
এই যে চোখ বুজলাম; চোখের গহীন থেকে শুরু হলো অনিশ্চিত যাত্রা- একটা গোল মার্বেল সে তার গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। অথবা অনিয়ন্ত্রিত এ গতিপথ কখনো অন্ধকারকে আবার কখনো আলোকে ভেতর দিকে শুষে নেয়। 
আর যদি নিজেকে তৃপ্তকরভাবে অস্বীকার করা যায়, যদি নিঃশেষে বিভাজ্য হতো অস্তিত্ত্বের খুনসুটি কাটা ভাজ্য জীবন। তবে বিনীতভাবেই ঈশ্বরকে স্বীকার করে নামিয়ে নেয়া যায় বিভাজনের সূত্রে।

০৮
ভেজা কাঠের গোপন কুঠুরীতে জলের বসবাস; নিকষ অন্ধকার আর আর্দ্র ঘ্রানে টান টান কাঠের মোলায়েম বুক; একটি লৌহ পেরেক খুঁজে নিল ভেজা কাঠের ভেতরের ভাপ; কাঠের প্রতিটি কুঠুরীতে নিঃসঙ্গ জল পেরেকের সান্নিধ্য চায়-প্রলম্বিত লৌহ কাঠামোয় শির শির অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে মস্তিস্কে - অসীম অনুরণনে।

০৯
একটা পাথরের বিশাল দেয়ালের পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে দেবদারুর শীর্ষ থেকে ঝরে পড়া বৃষ্টির ফোঁটাটি একটি সেগুন কাঠের টেবিলে এঁকে নেয় বিচ্ছিন্ন কারুকাজ। আজ বৃষ্টি হবে জেনে বাতাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আর এই সময়ে কাঁচঘরে নিঃশব্দে প্রবেশ করে নিলীন বাতাস- সেখানে অসংখ্য প্রজাপতি আর জোনাকি। একটি প্রজাপতির রঙ যেন কারো নখে লেগে থাকা ঠোঁটের পালিশ; আর একটির পাখায় নিকষ কালোয় টিকরে পড়ছে আঁধার নহর; ডানায় প্রলুব্ধ বিষ নিয়ে একটি প্রতীক্ষারত। একটি জোকার জোনাকি বেদনায় উড্ডীন-আলোহীন। আর এ রঙিন কাঁচঘরের পাশে ধাতবনিলয়ে চুপচাপ বসে আছে ধ্যানরত ভ্রমর। তার শরীরে খুদাই করা প্রাচীন অক্ষর। 

সত্য এই, অতি শ্রীঘ্রই কোন এক উৎসবে পাঠ হবে পলাতক রোদ। 

১০ 
বাঁশপাতায় মুদ্রিত দুপুরের রোদ
হল্লার আকাশে মেঘমেদুর অবয়ব
ক্ষণেই বিবর্তন;

একটা গান সুর হারায় রোজ
সুরের গহীনে নিমজ্জিত একটা ফুল

যে সন্ধ্যায় অন্ধকার আলোর সাথে পৃথক
দু'চারটে পোড়া পাতায় ছাই আর পোড়া ঘ্রাণ
সে সন্ধ্যায়ও বাঁশপাতায় আলো ফেলে পোড়ামুখী চাঁদ।

১১
নখ দিয়ে খুঁচিয়ে তুলি রঙের প্রলেপ
উড়িসশাশ-
ভেতর থেকে নেমে আসুক ঘূর্ণিময় লাভা;
লাভা ধারণ করুক করোটির বৃষ্টি-
স্নাত হোক পাপ, স্নাত হোক পাপ

দৃষ্টির গহীনে তলিয়ে যাচ্ছে সব-
দৃষ্টি মায়াহীন, ছলহীন
অথচ কলঙ্কময়

দেয়ালে দেয়ালে আঁকা শহরের পাপ
গভীরে লুকায়িত নদীটির ভাঁজে ভাঁজে ধাতব ধার-
রক্তাক্ত হই নদীর হাওয়ায়

আমাকে হত্যার পর চুম্বনে সিক্ত করো আহত ঠোঁট। 

১২
একবার নিজের ভেতর আটকা পড়ে গেলে,
নিজের বোধের ভেতর ক্রমশঃ গতিশীল
অথচ তীব্রগতিতে চক্রাকারে ঘূর্ণায়মান হলে
একই স্থানে ও সময়ে বারবার নিজের সাথে দেখা হতে থাকলে
বার - বার, বার - বার 

এই পথ হঠাৎ ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে:

বাজীর টেবিলে ৩২০ কোটি মার্কিন ডলার
উঁচু তর্জুনীতে গেঁথে যাওয়া বদ্ধমূল ইশারা
আর নর্তকীর নাভীতে ঘূর্নী তোলা পৃথিবী;
সরাবের গ্লাসের শেষ বিন্দুটিকে শুষে নিয়ে ভাববো-
আমি সরল রেখায় হাঁটছি। 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন